
চোরে না চেনে গবেষণার মোরগ
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে গবেষণার মোরগ– কোনো কিছুই আমরা রক্ষা করতে পারছি না। এটিই যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। চুরি যাওয়া রিজার্ভের অর্থ যেমন উদ্ধার করা যায়নি; তেমনি গবেষণাগার থেকে চুরি হওয়া মোরগেরও হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়েছিল। মঙ্গলবার সমকালে প্রকাশিত এক সংবাদে জানা গেল, সাভারে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে গবেষণার জন্য রাখা ৩৮টি মোরগ চুরি হয়ে গেছে। ঈদুল আজহার আগের রাতে মোরগগুলো চুরি হয়। ঈদের ছুটির পর প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা চুরির বিষয়টি জানতে পারলেও গোপন রাখা হয়েছিল। গবেষণার জন্য রাখা মোরগগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা বলেছেন, ঈদের আগের রাতে মোরগগুলো চুরি হয়েছে। শেডে ৩০০ মোরগ রয়েছে। এর মধ্যে আরআরআই ও হোয়াইট লেগুন জাতের ৩৮টি মোরগ চুরি হয়ে গেছে। মোরগগুলোর গবেষণার দায়িত্বে থাকা পোলট্রি উৎপাদন ও গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলছেন, এটি সম্পূর্ণ প্রশাসনিক বিষয়। এ ব্যাপারে তিনি মন্তব্য করতে অপারগ। মোরগ চুরির ঘটনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী যেমন ‘প্রশাসনিক’ দোহাই দিয়ে রক্ষা পেয়ে যাচ্ছেন; একইভাবে রিজার্ভের ডলারের চুরির ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নরও নিজেকে রেহাই করেছিলেন জবাবদিহির মুখ থেকে।
সাভারে গবেষণার মোরগ চুরির ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ধরনের ঘটনার পরে কমিটি গঠনের একটি রেওয়াজ আছে। এবারও তা-ই হয়েছে। আবার এ তদন্ত কমিটির ফল কখনও আলোর মুখ দেখবে না– এটাও অতীতের অজস্র ঘটনা থেকে অনুমান করা যায়।
এগুলো অন্যায়ের হিমশৈলের চূড়া মাত্র। এমন অনেক অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা থাকা সম্ভব। সব খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় না। তাই জানাও যায় না। সরকারি অর্থের নয়ছয়ের এমন আরও একটি ঘটনা সমকালে একই সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ৮ কোটির জায়গায় ৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। মহাপরিচালকের স্বাক্ষরেই এ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। সরকারি অর্থের এভাবে বণ্টনের দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর নিজেই দুর্যোগে পতিত। সরকারি অর্থ বিতরণে কোনো নিয়মকানুন যে মানা হয় না– এমন আরেকটি উদাহরণ জেলেদের চাল চুরির ঘটনা। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ইলিশের সুষম প্রজনন ও নির্বিঘ্ন বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত উপকূলের নির্দিষ্ট এলাকায় জেলেরা মাছ ধরতে পারবেন না। এ জন্য তাদের পরিবারকে দুই মাসের খোরাকি বাবদ ৮০ কেজি চাল দেওয়া হবে। পরে দেখা গেল, সরকারের প্রতিশ্রুত ৮০ কেজি চালের বদলে তাদের হাতে পৌঁছাচ্ছে মাত্র ৩৫-৩৬ কেজি। ত্রাণ ও সরকারি সহায়তার খাদ্য চুরির ঘটনায় শুধু দুস্থরাই সংকটে নিপতিত হন না; আশা নিয়ে তাকিয়ে থাকা মানুষেরা হতাশও হন। সরকারি অর্থ হোক কিংবা সম্পদ, তা জনগণেরই। এই অর্থ-সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে যারা থাকেন, তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনা না গেলে রাষ্ট্রের যে উদ্দেশ্য, তা অধরাই থেকে যাবে।